আসামীরা হলেন- মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চাইনিজ নাগরিক মি. কুকি (৩৫)।
সোমবার রাতে উত্তরখান ও গুলশান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে উত্তরখান থানা পুলিশ।
এসময় আসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত নগদ ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, চার হাজার ডলার ও বেশ কিছু অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, চারটি মোবাইল ফোনসেট ও কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের ডিসি তালেবুর রহমান।
উত্তরখান থানা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা নাহিদুল ইসলাম নামে একজনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখান। তারা তাকে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যার’ এর মাধ্যমে অনলাইনে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। তিনি সরল বিশ্বাসে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে পলারস্টেপ সফটওয়্যারে অনলাইনে কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতে নাহিদুল ইসলামকে ৮২০ টাকা কমিশন দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে তারা নাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় চার লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা গ্রহণ করে। এরপর আর কোন কমিশন না দিয়ে পুনরায় তিন লাখ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। তখন তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন একাউন্টটি উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজ’র নামে। তখন তিনি বিষয়টি উত্তরখান থানায় অবহিত করেন। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
আনাস এন্টারপ্রাইজ দোকানের মালিক মো. মোর্শেদ আলমকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ ডিসেম্বর প্রায় ৩২ লাখ টাকা যোগ হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং অবশিষ্ট টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে।
থানা পুলিশ তখন মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নেয় এবং তার কাছ থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দু’টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দতালিকা মূলে জব্দ করে।
মোর্শেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাতে বাবুর্চি বাড়ির গফুর মুন্সি রোডের একটি বাসা থেকে জামালকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনিও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
থানা পুলিশ তার কাছ থেকে ৪ হাজার ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, দু’টি মোবাইল ফোন এবং ব্যাংকের চেকবইয়ের কিছু পাতা জব্দ করে। জামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল গুলশান-১ এর AWR টাওয়ারের নিচ থকে চাইনিজ নাগরিক মি. কুকিকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা যা জানিয়েছেন, মি. কুকি নামে একজন চাইনিজ নাগরিকের সাথে জামালের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চায়নাতে গিয়ে জামালের পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মি. কুকি জানায় কিছুদিন পরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা দেবেন। ১৫-২০ দিন আগে উত্তরা রেস্টুরেন্টে মি. কুকির সাথে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে মি. কুকি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিতে বলে যে নাম্বারে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে এবং তিনি কুকির দেওয়া নাম্বারে সেই টাকা ট্রান্সফার করবে। কুকি জানায় এর বিনিময়ে জামাল কমিশন পাবে।
জামাল মি. কুকির প্রস্তাবে রাজী হয়ে মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নাম্বার মি. কুকিকে দেন।
গ্রেফতারকৃত মি. কুকি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে নিজে জড়িত থেকে তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে স্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী নাহিদুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপির উত্তরখান থানায় আটককৃত তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।