একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ব্যাংক হিসাবে বড় অংকের সন্দেহজনক লেনদেন ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণও মিলেছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক মো. নওশাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে টিম প্রথমে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ঢাকা থেকে ওই ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। অভিযানকালে ফাউন্ডেশনের দাপ্তরিক ঠিকানা সরেজমিনে যাচাই করে এর অস্তিত্ব পায়নি দুদক টিম।
তিনি আরও বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনের সমস্ত আয়ের ওপর কর মওকুফের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুদক টিম এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট এসআরও সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসআরও পর্যালোচনায় ২০১৬ সাল থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ও সঞ্চয়ী ব্যাংক আমানতের ওপর প্রাপ্ত সুদ, কনসালটেন্সি ফি, গবেষণা ফি বাবদ আয়সহ সব প্রকার আয়ের ওপর আয়কর প্রদান হতে অব্যাহতির নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।
অপরদিকে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল একটি বিশেষ আদেশে অটিস্টিক বা অটিজম শিশুদের মান উন্নয়নে কর্মরত সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে যে কোনো দান বা অনুদান আয়কর মওকুফ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন।
অভিযোগ ছিল পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন নেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। এর আগে গত ২৫ নভেম্বর সূচনা ফাউন্ডেশনে ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ অনুযায়ী সূচনা ফাউন্ডেশনের পরিচালিত সব হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ‘ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে’ পুতুল রাষ্ট্রের ‘বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’ করে নিজে লাভবান হয়েছেন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে লেখাপড়া করা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেরও তাকে সদস্য করা হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই রয়েছেন। আর গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন।