ফারুক হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক (খাগড়াছড়ি) : পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতী, তবলছড়ি, আমতলী, বেলছড়ি, তাইন্দং, বর্ণাল ও পৌরসভা এলকায় একশ্রেণির পাহাড় খেকো অবাধে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে।
শ্রেণি পরিবর্তন করে নানা কৌশলে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের প্রচেষ্টায় পাহাড়ে পরিবেশের দোহাই দিয়ে ইট ভাটা বন্ধ করা হলেও সদইচ্ছার অভাবে বন্ধ হয়নি পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা। প্রকাশ্যে কিংবা রাতের অন্ধকারে পরিবেশ আইন অমান্য করে দেদারসে চলছে পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা। পাহাড় খেকোদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সবুজ পাহাড়ও কৃষি ভূমি।
মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটার কারণে জীব বৈচিত্র ধ্বংশ ও পাহাড় গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে করে বর্ষা এলে যেকোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে পড়লে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
অপর দিকে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যও।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,উপজেলার তাইন্দং,তবলছড়ি,বর্ণাল, আমতলী,বেলছড়ি গোমতি মাটিরাঙ্গা সদর ও মাটিরাঙ্গা পৌরভায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার হিড়িক পরেছে। গোমতির গরগরিয়ায় রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
তাইন্দং,তবলছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সন্নিকটে পাহাড় কাটলেও অজানা কারণে নিরব রয়েছে পুলিশ।
তবলছড়ির শুকনাছড়িতে মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাটাড়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে পাহাড় কেটে কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে।
পাহাড় কাটা আইন অমান্য করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত ২০২০ সালে প্রথম মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ফেলোডার/ড্রেজার দিয়ে পাহাড় কাটার সূত্রপাত হয়। এর আগে সনাতনি পদ্ধতিতে কোদাল দিয়ে পাহাড় কাটা হতো।
সম্প্রতি পাহাড় ও কৃষি জমির উপরিভাগ কাটা একটি লাভ জনক ব্যবসা ও সিন্ডিকেটে পরিনত হয়েছে।
উজেলার তবলছড়ি ও গোমতিতে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১০টির বেশি মাটি কাটার মেশিন ফেলোডার/ড্রেজার পাহাড় কাটার কাজ করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজের নাম করে পেলোডার ভাড়া করে এনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিকে সন্ধা নামলেই পাহাড়/কৃষি জমির উপরি ভাগ কাটার মহাউৎসব শুরু হয়। এতে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে পাহাড় খেকো সিন্ডিকেটের সাথে গোপন চুক্তিতে পাহাড় কাটায় সহযোগিতা করছে ইউপি সচিবরা।
তবলছড়ি ইউপি সচিব ওসমান সহযোগিতার কথা অস্বীকার করে বলেন,ইউনিয়ন পরিষদের কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের কিছু কাজের জন্য ফেলোডার ভাড়া করা হয়েছে। সরকারী কাজের বাহিরে অন্য কোন কাজের সাথে তার সম্পৃক্ততা নাই বলে জানান তিনি।
তবলছড়ির স্থানীয় আক্তার হোসেন বলেন, একটি চক্র আইনের তোয়াক্কা না করে দেদারসে পাহাড় কেটে কৃষি জমি ও পুকুর ভরাট করছে। এতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে কর্তন করা পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার সবুজ আলী বলেন, কৃষি জমির টপ সয়েল/উপরি ভাগের মাটি সরিয়ে নিলে মাটির জৈব পদার্থ অফসারিত হয়। এতে মাটির গুনাগুন নষ্ট হয়। যার ফলে জমিতে সঠিক ফলন ফলেনা বলে জানান তিনি।
এদিকে পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও পাহাড়ে তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় প্রচলিত আইন অমান্য করে পাহাড় কাটায় ক্ষোভ জানান পরিবেশবাদীরা।
পাহাড় কাটার বিষয় নজরে পড়েছে উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান জানান, ইতি মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন সহ বিভিন্ন প্রশাসনের সাথে আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

