পরবর্তীতে গ্রামে তার মরদেহ দাফনেও বাধা দেওয়া হয়। ওই বৃদ্ধের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদবীধারী নেতা হওয়ায় তাকে হেনস্তা এবং মৃত্যুর পর মরদেহ দাফনে বাধা দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ পরিবারের।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার ছলিমপুর কাজীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই বৃদ্ধের নাম জানে আলম (৬০)। তিনিও একই এলাকার বাসিন্দা। তার ছেলে ফয়সাল আলম বাবলু ছলিমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে বাবলু আত্মগোপনে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর জানাজার নামাজ পড়তে যান জানে আলম। নামাজে যাওয়ার পর ‘তোর ছেলে আওয়ামী লীগ করে’ বলে নানাভাবে হেনস্তা করে স্থানীয় বিএনপির সমর্থকরা।
এছাড়াও বাড়ি-ঘর বিক্রি করে গ্রাম ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তার শার্টের কলার ধরে কয়েকবার ধাক্কা দেওয়া হয়।
জানে আলমের ভাতিজা মো. আশরাফ বলেন, ‘সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের কোনো দোকানপাটেও তাকে বসতে দেওয়া হয় না। নানাভাবে হেনস্তার পর তিনি একটি গাড়িতে করে ফৌজদারহাট চলে যান। সেই গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বুকে হাত দিয়ে পড়ে যান। স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।’
মরদেহ দাফনে বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু আমার চাচাকে অপমান করে মেরে ফেলেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন নিয়ে যাওয়া হলো গ্রামে সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে।
তার মরদেহ দাফন করতে দেয়নি। আমরা ৯৯৯-এ ফোন করেও সাহায্য পাইনি।’
‘শুধু ওনার (জানে আলম) ছেলে আওয়ামী লীগ সমর্থক—এটাই সমস্যা। আমার চাচা নিজে কোনো রাজনৈতিক দল করে না।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে তার বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা করা হয়েছে। তার বাড়ির বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। এত অমানবিক মানুষ কি করে হয়?’ যোগ করেন তিনি।
নিহতের ছেলে ফয়সাল আলম বাবলু বলেন, ‘ছলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রোকন ও তার বাহিনী আমার পিতার ওপর হামলা করে। স্থানীয়রা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে রোকন ও তার বাহিনীর সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ নগরের সিডিএ এলাকার কর্নেলহাট বাদামতলীর জাহানখীল এলাকায় সকাল ১০টার দিকে দাফন করা হয়েছে। সেটি আমার নানা বাড়ি।’
এ বিষয়ে জানতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে. এম. রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।