স্টাফ রিপোর্টার : ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল সাদী।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
বুধবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। তিনি ছিলেন পেশায় চিকিৎসক, পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। ২০০৬ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।
আহমদ রফিক বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক। রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে। কবিতা, প্রবন্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও গবেষণা—সব মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন তিনি।
২০১৯ সাল থেকে তার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। অস্ত্রোপচার করেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। তবুও তিনি লেখালেখি ও গবেষণার কাজ চালিয়ে গেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার শোক ;
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আহমদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের এক অগ্রগণ্য সাক্ষী ও সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রবীন্দ্রতত্ত্বচর্চার দিশারি। শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। রবীন্দ্রচর্চায় তার অবদান দুই বাংলায় সমানভাবে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার জগতে আহমদ রফিকের প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি। দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শেষ দিন পর্যন্ত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন। আহমদ রফিকের জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে স্মরণ করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা আহমদ রফিকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, শুভানুধ্যায়ী ও সাহিত্য–সংস্কৃতিমনা জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।