আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য–বীর্য ও আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
৩০ লাখ শহিদের রক্ত ও দুই লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের দিনটি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করছে।
দিনের শুরুতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষও শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে।
জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফ্লাই–পাস্ট প্রদর্শন এবং বিশেষ ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন, যা সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনীর ফ্লাই–পাস্ট এবং পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশের জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আবৃত্তি, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকাল ৯টায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বিকেল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে। একই সময়ে দেশের ৬৪ জেলায় নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি পালন করছে।
রাষ্ট্রপতি আজ বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানাবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও দেশের শান্তি–সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে। সরকারি জাদুঘরগুলো আজ বিনা মূল্যে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

