ফারুক হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক (খাগড়াছড়ি) : শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণে দেশের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
তিন দফা দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকেরা।
সারাদেশের ন্যায় বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রায় ৭৮টি বিদ্যালয়ে সকাল বেলায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগের রাতে হঠাৎ ডাকা এই কর্মসূচির খবর অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানতে না পারায় আজ পরীক্ষা দিতে স্কুলে এসে বিপাকে পড়েন। তবে মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার প্রায় ১২ টি স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় কার্যত থমকে গেছে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
হঠাৎ স্কুল বন্ধ থাকায় ও বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা। তারা বলেন, বছরের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মবিরতি ও তালাবদ্ধ কর্মসূচিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে তাদের শিশু সন্তানেরা। পরীক্ষার সময় শাটডাউনে শিশুদের পড়াশোনায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছে বলে তারা মনে করেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। কুসুম বেগম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে ছোট ক্লাসের বাচ্চারা পড়াশোনা থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায়। বাসায় তো তারা ঠিকভাবে পড়তে চায় না। শিক্ষকদের দাবি থাকতে পারে কিন্তু এভাবে বন্ধ হলে ক্ষতিটা কিন্তু আমাদের বাচ্চাদেরই হয়।’ মহিউদ্দিন নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘পরীক্ষা হচ্ছে না। যা নিয়ে আমাদের বাচ্চারাও দুশ্চিন্তায় আছে। সরকার আর শিক্ষকরা বসে সমস্যার দ্রুত সমাধান না করলে এই ক্ষতিপূরণ করা কঠিন হবে। আমরা চাই দুই পক্ষই আলাপ করে দ্রুত স্কুল খুলে দিক।
উপজেলা শিক্ষক নেতাদের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ ব্যপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঝর্ণা চাকমা জানান, সহকারী শিক্ষকদের দাবী যোক্তীক, তাদের দাবী মেনে নেওয়া উচিৎ। বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন কতটুকু যুক্তিযুক্ত, আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিবেন কিনা এবং বন্ধ পরিক্ষা পরবর্তীতে নেওয়া হবে কীনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উর্ধতন কতৃপক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণসংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্যথায় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে যুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের গত ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি এবং পরে ৩ ডিসেম্বর থেকে তথাকথিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অবহিত।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ এবং বিদ্যমান পরিস্থিতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানানো হলো।