বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৯ মে) শহরের ঘোষপাড়া এলাকায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ তালুকদারের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।
এসময় অধিদফতরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অফিস থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কার্যালয়ে মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য নিতে গেলে পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ অফিস থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বারবার এড়িয়ে যান এবং কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পরক্ষণেই তাদের ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত একটি কক্ষে ঢুকে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ, চোলাই মদ এবং বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এছাড়া সেখানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রও মজুত ছিল।
তাৎক্ষণিকভাবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ম্যাজিস্ট্রেট আসার পর তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র জব্দ করেন। সরকারি অফিসে এমন মালামাল রাখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম তিনি দেখাতে পারেননি।
এসময় জব্দ করা হয় চোলাই মদ ৪০.৫ লিটার, বিদেশি মদ ৩ লিটার (১ লিটার + ০২ বোতল), দেশীয় অস্ত্র ১৪টি, বিদেশি মদের খালি বোতল ২৬টি, ফেনসিডিলের খালি বোতল ১৫৫টি, ফেনসিডিল ৮ বোতল, টাপেন্ডাভল ট্যাবলেট ১২ পাতা, হেরোইন পুরিয়া ১৮টি, ইয়াবা ট্যাবলেট ৮৫ প্যাকেট (প্রায় ৩৫০ পিস + ৫০টি), প্যাথেডিন ৮ ডোস অ্যাম্পুল, ব্রুপেনের ফাইন ইনজেকশন ৯৩টি, গাঁজা ২৫০ গ্রাম + ৬৪টি পুরিয়া, আলোয়া পাতা ২৫০ গ্রাম, কালো রঙের তরল ৫০০ মিলি, সিরিঞ্জ ৫টি, মোবাইল ১০টি এবং নগদ ২০০০ টাকা।
মাদকদ্রব্য অফিসের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, জব্দকৃত কিছু মাদক মামলার এজাহারভুক্ত। তবে তিনি সেগুলোরও কোনো নির্দিষ্ট কাগজ দেখাতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ঠাকুরগাঁও অফিসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। তারা মানুষকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিত, সেটাই আজকে প্রকাশ পেয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন মিডিয়ায় তার নামে কয়েকবার নিউজ হয়েছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘এই অভিযান ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভেতরের চিত্র উন্মোচন করেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একটি সরকারি অফিসে কীভাবে এতো বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র মজুত থাকে? জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাদকদ্রব্য অফিসের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও জেলায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক দিয়ে মানুষকে ফাঁসিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসিক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগও আছে। তাকে প্রতি মাসে টাকা না দিলে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দেন না- এমন অভিযোগও প্রায়ই শোনা যায়।