চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ শিশুর জোড়া লাগা দুটি শরীরকে আলাদা করা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে দুই নবজাতকই সুস্থ রয়েছে। গত ৬ মে নগরের অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে শিশু দুটি জন্মগ্রহণ করে এবং ৭ মে তিন ঘণ্টাব্যাপী জটিল এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম এই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে রিয়াসাত ও রেনিশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) বিকেলে হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি জানায় কর্তৃপক্ষ।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদ। তিনি জানান, জন্মের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে শিশু দুটির অস্ত্রোপচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোড়া লাগানো শিশু আলাদা করার ঘটনা বলে তিনি দাবি করেন।
ডা. আদনান ওয়ালিদ জানান, দুই শিশুর বুক ও পেটের অংশ প্রায় আড়াই ইঞ্চি জুড়ে সংযুক্ত ছিল। শ্বাসনালির কিছু অংশও একসঙ্গে ছিল। ঝুঁকি থাকলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
তিনি জানান, এটা আমার ক্যারিয়ারের প্রথম স্বাধীন নেতৃত্বে করা অপারেশন। ঢাকায় রিফা-শিফার সময় আমি ছিলাম সহকারী পর্যবেক্ষক। এবার বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন চিকিৎসক তিন ঘণ্টা ধরে অপারেশনে অংশ নেন, যার মধ্যে ৮ জন ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে। এখন শিশু দুজনই সুস্থ।
হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ রেশমা শারমিন জানান, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে শিশু দুটি জোড়া লাগানো বলে ধরা পড়ে। পরে আরও দুবার আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় এক শিশুর রক্ত সঞ্চালন কম পাওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটির। জন্মের সময় তাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম। বর্তমানে ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, ডেপুটি চিফ অব মেডিকেল সার্ভিসেস ফজল-ই-আকবর এবং এনেস্থিওলজিস্ট মো. মাসুদ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সাফল্য চট্টগ্রামে প্রথম এবং সারা দেশের মধ্যে ষষ্ঠ। সে সঙ্গে ভবিষ্যতেও জটিল ও উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি ।