শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটি বলেন।
উপদেষ্টা তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘ভুলে যাবার আগে বলি, কালুরঘাট সেতুর কাজ কখন চালু হবে তা নিয়ে জানতে চেয়েছিল একজন। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালুরঘাট নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে।’
‘চট্টগ্রামে আমি আরেকটি কাজ দেখতে এসেছি। টানেল। কোনো গাড়ি দেখলাম না। এটি একটা অপরিকল্পিত পরিকল্পনা। আসলে পরিকল্পনা ছিলো- মাতারবাড়িতে একটা গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। এবং যাতায়াতের জন্য একটা সড়ক সংযাগ হবে। সেখানে একটা ইকনোমিক জোন হবে। কিছুই হয়নি। শুধু সেখানে একটা বিদ্যুৎ প্লান্ট হয়েছে। আর এখানে একটা টানেল হয়ে গেছে। অপচয়ের উন্নয়ন আমরা করতে রাজি না।’-যোগ করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার কোনো ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। আমরা একটা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব ও ক্ষমতার মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। ক্ষমতা হলে গায়ে একটু গরম, গরম লাগে। নিজেকে খুব বড় মনে হয়। অন্যদিকে আপনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, নিজেকে খুব খাটো মনে হয়। সবসময় মনে হয়, আমি আমার কাজটি করতে পারছি তো?’
আরও একটি রিফাইনারি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, ‘আমাদের একটা রিফাইনারি আছে। অনেক পুরনো। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা দ্বিতীয় রিফাইনারির উদ্যোগ নিয়েছি। আপনারা জানেন, দুর্বৃত্তায়নের কারণে নতুন রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। ইস্টার্ন রিফাইনারির কাজটা আমরা সহসা হাতে নেবো।’
বিদ্যুৎখাতে সুখবর আছে জানিয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, ‘বিদ্যুৎখাতে কিছু সুখবর আছে। একটা সুখবর হচ্ছে- সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল আইনের মাধ্যমে।
২০১০ সালে এই আইন করা হয়েছিল। এটি হলো দ্রুত লেনদেনের আইন। এটা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। শাহদিন মালেক এটাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। হাইকোর্ট আইনটিকে সংবিধানবিরোধী বলেছেন।
আপনারা জানেন আমাদের চুক্তিগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি। চাইলেই বা সহজেই বের হওয়া যায় না। এজন্য আমরা ধীরস্থির ভাবে এগুচ্ছি।’
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির আরো বলেন, ‘গ্যাসের সংকটের কারণে প্রতিবছর ৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস আমদানি হয়। এ বছরই আমরা ৫০টি কূপ খনন করবো। আগামী দুই বছরে আরও একশটি কূপ খনন করবো। জ্বালানি আমাদানি করাটা সহজ। সে কাজটা করা হয়নি। কিন্তু কূপ খনন করে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করার চেষ্টাটাও হয়নি। আমরা নবায়নযোগ্য একটি শক্তিতে বিনিয়োগ করতে চাই।’
এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু ম্যানেজম্যান্ট সেন্টার মেমন হসপিটালে করা হয়েছে। এন্টিজেন টেস্ট যেটি বাইরে চারশ’-পাঁচশ টাকা, সেটি আমি বিনামূল্যে চট্টগ্রামবাসীর জন্য করে দিয়েছি। এরপর আমি যা করেছি, সেটি হলো বিপ্লব উদ্যান। আগে যারা মেয়র ছিলেন, কাউন্সিলর ছিলেন; তারা লুটপাট করেছে। ১০-১৫ কোটি টাকা নিয়েছে। সেখানে আবারও মার্কেট করার জন্য পুরো বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা করেছে। সমস্ত স্থাপনা ভেঙে দিয়েছি। আমি স্পষ্ট বলতে চাই— এখানে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসের স্থান হবে না। আর যদি কেউ করতে চান, সেটা আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করবো।’
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ছাড়াও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি’’র প্রতিনিধি মেজর মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।